মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি

সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে যে কয়টি ভ্রমণ গন্তব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হল রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি



সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ । সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু , পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত । সাজেক হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন ; যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । এখানে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প অবস্থিত । সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উঁচুতে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প । বিজিবি সদস্যদের সুষ্ঠ পরিকল্পনায় , বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের দ্বারাই বর্তমান সাজেকের এই ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে । বর্তমানে সাজেকে ভ্রমণরত পর্যটকদের জন্য প্রায় সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় । সারাবছরই সাজেক যাওয়া যায়। আর সাজেকে পাহাড়ধস বা রাস্তাধস এরকম কোন ঝুকি নেই । সাজেক রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়া এই দুটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত । ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট । আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়-এ কংলাক পাড়া অবস্থিত । সাজেকে মূলত লুসাই ,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে। সাজেকের কলা ও কমলা বেশ বিখ্যাত । রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে । তাই সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় রাঙামাটির ছাদ


যাতায়াত

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার । রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক যাওয়া যায় । সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ি থেকে । খাগড়াছড়ি শহর অথবা দীঘিনালা হতে স্থানীয় গাড়িতে ( জিপ গাড়ি , সি.এন.জি , মটরসাইকেল ) করে সাজেকে যাওয়াই হচ্ছে বর্তমানে সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যম । এক্ষেত্রে পথে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প । সেখান থেকে ভ্রমণরত সদস্যদের তথ্য দিয়ে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে । একে আর্মি এসকর্ট বলা হয় । আর্মিগণের পক্ষ থেকে গাড়িবহর দ্বারা পর্যটকদের গাড়িগুলোকে নিরাপত্তার সাথে সাজেক পৌছে দেয়া হয় । দিনের দুইটি নির্দিষ্ট সময় (সকাল ১০:৩০ এবং বিকাল ৩:৩০) ব্যতীত আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ হতে সাজেক যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না । পর্যটকদের সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই নিয়ম অনুসরণ করা হয় । সাজেকগামী জিপ গাড়িগুলো স্থানীয়ভাবে চান্দের গাড়ি নামে পরিচিত । সাজেক যাওয়ার পথে বাঘাইহাটে হাজাছড়া ঝর্ণা অবস্থিত । অনেক পর্যটকগণ মূল রাস্তা হতে সামান্য ট্রেকিং করে গিয়ে ঝর্ণাটির সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন ।

প্রাকৃতিক রূপ

সাজেকে সর্বত্র মেঘ , পাহাড় আর সবুজের দারুণ মিতালী চোখে পড়ে । এখানে তিনটি হেলিপ্যাড বিদ্যমান ; যা থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায় । সাজেকে একটা ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হচ্ছে এখানে ২৪ ঘণ্টায় প্রকৃতির তিনটা রূপই দেখা মিলে । কখনো খুবই গরম , একটু পরেই হটাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরেই হয়তো চারদিকে ঢেকে যায় মেঘের চাদরে ; মনে হয় যেন একটা মেঘের উপত্যকা । সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায় । কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া । কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড় , আদিবাসীদের জীবনযাপন , চারদিকে মেঘের আনাগোনা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় । বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত উপজাতিয় উৎসব এবং তাদের সংস্কৃতির নানা উপকরণ পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন ।

0 comments:

Copyright © 2018 Info Bank